১লা বৈশাখ
সুনৃতা মাইতি
কে যেন বলেছিল স্বপ্নের নাকি কোনও রং হয়না । গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবার পথে স্বপ্ননগর আসে। আর সেই রঙহীন অবচেত দোলায় ঘুরে বেড়ায় মনগহন। কিন্তু আমি যে তখন প্রতিটি স্বপ্নে দিব্যি দেখেছি রঙের খেলা । শুধু স্বপ্ন তো নয়! বিবর্ণ সাদাকালো অ্যালবামে লুকিয়ে থাকা রঙের ছোঁয়া খুঁজে খুঁজে কত দুপুর কেটে গেছে ... কত সন্ধ্যার মরা আলোয় খুঁজে পেয়েছি রঙিন শব্দের কলতান.... কত রাতের নিকষ অন্ধকার ঢেকে গেছে রাতপরীদের রঙমিছিলে।
সেই রংরেজ সময়ের ঢং ছিল পুরোদস্তুর। আচ্ছা স্মৃতির কি কোনও নির্দিষ্ট রঙ আছে? কে যেন বলেছিল ধূসর । কিন্তু আমি তো চোখ বুজলেই বেশ দেখতে পাই স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে ওঠা সবুজ আবহ, বৃষ্টির জলে রূপোলী ঝিলিক , ভাদুরিয়া রোদের আগুনখেকো খর রঙ,আশ্বিনের নীল মাখা সফেদ প্রসন্নতা, অঘ্রাণের শীতমাখা আদুরে মুক্তো রঙের রোদ্দুর আর ফাগুনের পলাশ বরণ হ্যাংলামো।
এক একটা ফাল্গুণি বাসন্তি দুপুরে বয়ে যেত বেহিসাবি হাওয়া । খয়েরী ঝরা পাতার দল এলোমেলো ঘুরে বেড়াত এধারে ওধারে। অচেনা অজানা কোনও গলিপথ হাতছানি দিত আলগোছে।ওই দূরের আঁকাবাঁকা পথে কি যেন এক রঙিন নেশার হাতছানি।
আর চৈতি বিকেলের সর্বনেশে প্রহর শেষের খেলার রক্তাভ রঙ মেখে হারিয়ে যেত গোটা একটি বছর। পরদিন রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ । নতুন বছর । আমরা বলতাম একলা বৈশাখ ।সবাই হেসে কুটোপাটি হত।কেন!! ১লা তো লেখা থাকে কার্ডে। নববর্ষের কার্ডে। বৈশাখ বুঝি একলা ভারী ! ছোটো ছোটো হাতের তৈরী অপটু রঙচঙে কাগুজে কার্ডে ভুল বানান ভরা ট্যারাব্যাঁকা অক্ষর । হৃদয়ের প্রীতি ও শুভেচ্ছা ভরা । নীচে লেখা ১লা বৈশাখ । আর সণ , তারিখ । হৃদয়ের রঙ বুঝি লাল!
সময় বয়ে গেছে অনেক ! এখনও আশেপাশে কত রঙের খেলা নিরন্তর । তবুও ফ্যাকাসে হয়ে আসে রঙ। বড় সস্তার রঙ কি! নাকি কৃত্রিম! অথবা বোধহয় চোখের জ্যোতি কমে আসছে। চৈত্র শেষের পথ ধরে এখনও নিয়ম বেঁধে আসে বৈশাখ । পয়লা বৈশাখ । অথবা একলা বৈশাখ ।
No comments:
Post a Comment